০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমিরাতে  বৈধ হলেন ৫০ হাজার বাংলাদেশি সাধারণ ক্ষমা শেষ

Reporter Name
  • Update Time : ১০:১১:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৪৭ Time View
শীতার্ত মানুষের পাশে দাড়াতে আসুন
মানবিক আবেদন

সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য ঘোষিত ২০২৪ সালের সাধারণ ক্ষমা ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দুই মাসের সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ দুই মাস বাড়িয়ে চার মাস করা হলেও মাত্র ৫০ হাজার বাংলাদেশি এ সুযোগ নিয়েছেন। আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাসপোর্ট ও ভিসা উইং–এর প্রধান কাউন্সেলর সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সাধারণ ক্ষমার পুরো সময়ে দূতাবাস মোট ই–পাসপোর্ট ইস্যু করেছে ১৩ হাজার ৯৩১টি, এমআরপি পাসপোর্ট ৫ হাজার ৮১৫টি, ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেছে ৮১৭টি এবং এক বছরের জন্য পাসপোর্ট নবায়ন করেছে ২ হাজার ৩টি। আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর হাজরা সাব্বির হোসেন বলেন, এবারের সাধারণ ক্ষমায় প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি নিয়মিত হয়েছেন। পাশাপাশি আবুধাবি ও দুবাই থেকে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসী নিয়মিত হয়ে ট্রাভেল পারমিট বা আউট পাস নিয়ে দেশে ফিরে গেছেন, যাদের ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা লাগেনি।
দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনসুলেটে কর্মরত প্রথম প্রেস সচিব মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, গত চার মাসে দুবাই কনস্যুলেট ৪ হাজার ৮৪০টি ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেছে। এ সময় ই–পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে ৪৭ হাজার ৬০৯টি, এমআরপি পাসপোর্ট ৭ হাজার ১৭৫টি এবং পাসপোর্ট সেবা দেওয়া হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার প্রবাসীকে। তবে সাধারণ ক্ষমার আওতায় কতজন প্রবাসী দুবাই কনস্যুলেটের অধীনে নিয়মিত হয়েছেন সে ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত স্থানীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে আবুধাবির ফেডারেল অথরিটি ফর আইডেন্টিটি, সিটিজেনশিপ, কাস্টমস অ্যান্ড পোর্ট সিকিউরিটির (আইসিপি) মহাপরিচালক সুহেইল আল খাইলি জানান, সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৮% তাদের অবস্থান বৈধ করে আমিরাতে থেকে যাচ্ছেন এবং ১২% তাদের অবস্থান বৈধ করে কোনরকম নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই দেশে ফিরে গেছেন।
আমিরাতের মোট জনসংখ্যার তিন–চতুর্থাংশই অভিবাসী। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে আইনশৃঙ্খলার আওতায় রেখে দেশের উন্নয়নে অন্তর্ভুক্ত করাই সাধারণ ক্ষমার মূল উদ্দেশ্য। গত দুই দশকে এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর আগে ২০০৩ সালে ৩ লাখ, ২০০৭ সালে ২ লাখ ৭৮ হাজার, ২০১৩ সালে ৬১ হাজার ৮২৬, এবং ২০১৮ সালে ১ লাখ ৫ হাজার অভিবাসী তাদের অবস্থান বৈধ করেছিলেন।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, আমিরাতে তৃতীয় বৃহত্তম অভিবাসী জনগোষ্ঠী বাংলাদেশিদের মধ্যেই অবৈধ থাকার হার বেশি। তবে এবার মাত্র ৫০ হাজার বাংলাদেশি তাদের অবস্থান বৈধ করেছেন। এর পাশাপাশি প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি ট্রাভেল পারমিট নিয়ে দেশে ফিরে গেছেন। এবারের সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ বাড়ানো, আউট পাসের মেয়াদ সাধারণ ক্ষমার সময় পর্যন্ত বৃদ্ধি এবং ভ্রমণ ভিসায় থাকা ব্যক্তিদের সুযোগ দেওয়ার মতো উদার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এমনকি অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের রেসিডেন্সি নিশ্চিত করার সুযোগও দেওয়া হয়।
সাধারণ ক্ষমার সময় যারা নিজেদের অবস্থান বৈধ করেননি, তাদের জন্য জানুয়ারি থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আমিরাত সরকার। প্রতিদিনের জন্য ৫০ দিরহাম জরিমানা আরোপসহ অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এদিকে ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশিদের জন্য কর্মী ভিসা স্থগিত রয়েছে। আমিরাতে বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশি থাকলেও ভিসা জটিলতার কোন সমাধান মেলেনি। তবে ২০২৫ সালের শুরুতে এই জটিলতা দূর হতে পারে বলে আশা করছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্ট ও প্রবাসীরা।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

আমিরাতে  বৈধ হলেন ৫০ হাজার বাংলাদেশি সাধারণ ক্ষমা শেষ

Update Time : ১০:১১:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫

সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য ঘোষিত ২০২৪ সালের সাধারণ ক্ষমা ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দুই মাসের সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ দুই মাস বাড়িয়ে চার মাস করা হলেও মাত্র ৫০ হাজার বাংলাদেশি এ সুযোগ নিয়েছেন। আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাসপোর্ট ও ভিসা উইং–এর প্রধান কাউন্সেলর সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সাধারণ ক্ষমার পুরো সময়ে দূতাবাস মোট ই–পাসপোর্ট ইস্যু করেছে ১৩ হাজার ৯৩১টি, এমআরপি পাসপোর্ট ৫ হাজার ৮১৫টি, ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেছে ৮১৭টি এবং এক বছরের জন্য পাসপোর্ট নবায়ন করেছে ২ হাজার ৩টি। আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর হাজরা সাব্বির হোসেন বলেন, এবারের সাধারণ ক্ষমায় প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি নিয়মিত হয়েছেন। পাশাপাশি আবুধাবি ও দুবাই থেকে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসী নিয়মিত হয়ে ট্রাভেল পারমিট বা আউট পাস নিয়ে দেশে ফিরে গেছেন, যাদের ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা লাগেনি।
দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনসুলেটে কর্মরত প্রথম প্রেস সচিব মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, গত চার মাসে দুবাই কনস্যুলেট ৪ হাজার ৮৪০টি ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেছে। এ সময় ই–পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে ৪৭ হাজার ৬০৯টি, এমআরপি পাসপোর্ট ৭ হাজার ১৭৫টি এবং পাসপোর্ট সেবা দেওয়া হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার প্রবাসীকে। তবে সাধারণ ক্ষমার আওতায় কতজন প্রবাসী দুবাই কনস্যুলেটের অধীনে নিয়মিত হয়েছেন সে ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত স্থানীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে আবুধাবির ফেডারেল অথরিটি ফর আইডেন্টিটি, সিটিজেনশিপ, কাস্টমস অ্যান্ড পোর্ট সিকিউরিটির (আইসিপি) মহাপরিচালক সুহেইল আল খাইলি জানান, সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৮% তাদের অবস্থান বৈধ করে আমিরাতে থেকে যাচ্ছেন এবং ১২% তাদের অবস্থান বৈধ করে কোনরকম নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই দেশে ফিরে গেছেন।
আমিরাতের মোট জনসংখ্যার তিন–চতুর্থাংশই অভিবাসী। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে আইনশৃঙ্খলার আওতায় রেখে দেশের উন্নয়নে অন্তর্ভুক্ত করাই সাধারণ ক্ষমার মূল উদ্দেশ্য। গত দুই দশকে এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর আগে ২০০৩ সালে ৩ লাখ, ২০০৭ সালে ২ লাখ ৭৮ হাজার, ২০১৩ সালে ৬১ হাজার ৮২৬, এবং ২০১৮ সালে ১ লাখ ৫ হাজার অভিবাসী তাদের অবস্থান বৈধ করেছিলেন।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, আমিরাতে তৃতীয় বৃহত্তম অভিবাসী জনগোষ্ঠী বাংলাদেশিদের মধ্যেই অবৈধ থাকার হার বেশি। তবে এবার মাত্র ৫০ হাজার বাংলাদেশি তাদের অবস্থান বৈধ করেছেন। এর পাশাপাশি প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি ট্রাভেল পারমিট নিয়ে দেশে ফিরে গেছেন। এবারের সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ বাড়ানো, আউট পাসের মেয়াদ সাধারণ ক্ষমার সময় পর্যন্ত বৃদ্ধি এবং ভ্রমণ ভিসায় থাকা ব্যক্তিদের সুযোগ দেওয়ার মতো উদার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এমনকি অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের রেসিডেন্সি নিশ্চিত করার সুযোগও দেওয়া হয়।
সাধারণ ক্ষমার সময় যারা নিজেদের অবস্থান বৈধ করেননি, তাদের জন্য জানুয়ারি থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আমিরাত সরকার। প্রতিদিনের জন্য ৫০ দিরহাম জরিমানা আরোপসহ অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এদিকে ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশিদের জন্য কর্মী ভিসা স্থগিত রয়েছে। আমিরাতে বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশি থাকলেও ভিসা জটিলতার কোন সমাধান মেলেনি। তবে ২০২৫ সালের শুরুতে এই জটিলতা দূর হতে পারে বলে আশা করছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্ট ও প্রবাসীরা।