রক্তচোষা জলের ‘ড্রাকুলা’কে রান্না করা হয় তার রক্ত দিয়েই

রক্তচোষা জলের ‘ড্রাকুলা’কে রান্না করা হয় তার রক্ত দিয়েই

রক্ত খায় হাঙরের, মুখে অসংখ্য দাঁত! রক্তচোষা জলের ‘ড্রাকুলা’কে রান্না করা হয় তার রক্ত দিয়েই।
ইউরোপের একটা অংশের মানুষের কাছে ল্যাম্প্রে মাছ খুব প্রিয়। বিশেষ করে পোর্তুগালের নাগরিকেরা সেই মাছ খেতে খুব পছন্দ করেন।
দেখতে ভয়ঙ্কর। মুখের অংশ ততোধিক ভয়ঙ্কর। মুখের একদম সামনে রয়েছে চোষক। সেই চোষকের উপর ছোট ছোট ধারালো প্রচুর দাঁত। চোষক দিয়ে হাঙর বা অন্য কোনও সামুদ্রিক প্রাণীর শরীর থেকে রক্ত খায় এরা। সরু এবং লম্বা সেই মাছের যেমন সুনাম, তেমনি দুর্নাম। কথা হচ্ছে ল্যাম্প্রের।
জুলিয়াস সিজ়ারের ব্যাঙ্কোয়েটের অন্যতম লোভনীয় পদ নাকি ছিল ল্যাম্প্রে। ভয়ঙ্কর দর্শন সেই মাছ নাকি খেতে দারুণ পছন্দ করতেন জুলিয়াস।
ল্যাম্প্রে হল এক বিশেষ ধরনের মাছ। লম্বা এবং গোলাকার এই মাছ বহু প্রাচীন। ল্যাম্প্রের বিশেষত্ব হল এদের চোয়াল নেই।
চোয়ালের বদলে মুখের মধ্যে অসংখ্য ক্ষুদ্র দাঁত রয়েছে। এর ফলে এদের দেখতে ঠিক মাছের মতো নয়, ‘সামুদ্রিক দানবের’ মতো।
চোয়াল থাকে না বলে খাবার ধরে খেতে পারে না ল্যাম্প্রে। জলজ প্রাণীদের গায়ে নিজেদের গোলাকার মুখ লাগিয়ে তাদের রক্ত শুষে খায়। সে কারণে এরা সম্পূর্ণ পরজীবী প্রাণী হিসাবেই বেঁচে থাকে।
অন্য জলজ প্রাণীদের গায়ে অসংখ্য দাঁতযুক্ত মুখ দিয়ে আটকে থাকে ল্যাম্প্রে। সে ভাবেই এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাতায়াতও করে ওই প্রাণীদের সঙ্গে।তবে ল্যাম্প্রের বাচ্চারা ‘ড্রাকুলা দাঁত’ নিয়ে জন্মায় না। জন্মের সময় মুখও থাকে না। ল্যাম্প্রের প্রাপ্তবয়স্ক হতে সাত বছর সময় লাগে। সেই মাছ ১৫ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
ইউরোপের একটা অংশের মানুষের কাছে ল্যাম্প্রে মাছ খুব প্রিয়। বিশেষ করে পোর্তুগালের নাগরিকেরা সেই মাছ খেতে খুব পছন্দ করেন।
পর্তুগালের মতো দেশে ল্যাম্প্রে মাছ রান্না করা হয় সেই মাছের রক্ত দিয়েই। মনে করা হয় রক্তে ভিজিয়ে রাখলে বা রক্ত দিয়ে রান্না করলে ল্যাম্প্রের স্বাদ বাড়ে।
মধ্যযুগে উৎসব মানেই এই পদ রান্না হত বাড়িতে বাড়িতে। সেই রক্তে ভাত মাখিয়ে এক সময় নাকি উপভোগ করে খেতেন পর্তুগালের মানুষ।
আবার অনেকের মতে, ল্যাম্প্রে অন্য প্রাণীর রক্ত শুষে খায় বলেই নাকি শাস্তি হিসাবে তার রক্তেই তাকে রান্না করা হয়। ল্যাম্প্রে নিয়ে এ রকম নানা কথা শোনা যায়।
আজও প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল ল্যাম্প্রে উৎসব পালন করে পর্তুগাল। এই সময় পর্তুগালের প্রতিটি রেস্তরাঁয় এই পদ পাওয়া যায়।
ইউরোপের অনেক দেশে উপভোগ্য হলেও উত্তর আমেরিকার মানুষেরা আবার ল্যাম্প্রে মাছকে ভয় পান।
উত্তর আমেরিকার গ্রেট লেক-এ বৃহদাকার ল্যাম্প্রের দেখা মেলে। কিন্তু সেখানকার মানুষের কাছে সেগুলো জলজ দানব।
বড় বড় মাছ বা অন্যান্য জলজ প্রাণীর শরীর থেকে চোষক দিয়ে রক্ত শুষে নিয়ে তাদের মেরে ফেলে ল্যাম্প্রে। তাই মানুষ ওই হ্রদে নামতে ভয়ও পান। যদিও মানুষের শরীর থেকে রক্ত শুষে নেওয়ার কোনও তথ্য এখনও নেই।
চোয়ালবিহীন মাছেদের মধ্যে ল্যাম্প্রে ছাড়াও আরও একটি মাছ রয়েছে। সেটি হল হ্যাগফিশ।

 

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *